০৭:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

একুশে ফেব্রুয়ারি

  • জাহাঙ্গীর আলম
  • আপডেট সময়: ০৩:৫৯:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 72

একুশে ফেব্রুয়ারি (২১ ফেব্রুয়ারি)

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়, এবং এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এই দিনে ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর মূল কারণ এবং তা পালনের গুরুত্ব নিচে ব্যাখ্যা করা হলো:

ভাষার অধিকার রক্ষায় আন্দোলন :

– ১৯৪৭ সালে ভারত বিভाजन শেষে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের দুটি প্রধান অংশ ছিল ” পূর্ব পাকিস্তান ” (বর্তমানে বাংলাদেশ) এবং ” পশ্চিম পাকিস্তান ” (বর্তমানে পাকিস্তান)। পশ্চিম পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়, যদিও বাংলায় কথা বলত মানুষের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তানি সরকার ” উর্দু ” ভাষাকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা বাংলাভাষী মানুষের কাছে অত্যন্ত অবমাননাকর ছিল। বাংলার ভাষা-ভাষীরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে, এবং প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীরা *ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে* আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশ গুলি চালিয়ে *শহীদ করে*। এই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে যায়।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা :

একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা এবং বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার এক প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহীদদের আত্মত্যাগ এবং আন্দোলনের ফলে, একদিকে বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি লাভ করে, অন্যদিকে বাংলাভাষী মানুষের আত্মপরিচয় ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের জাতীয় ঐতিহ্য :

একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় চেতনার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি একটি ঐতিহাসিক দিন, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ হিসেবে কাজ করেছে। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব স্মরণ করা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল স্তম্ভগুলোর একটি।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস :

১৯৯৯ সালে, জাতিসংঘ (UNESCO) ২১ ফেব্রুয়ারি কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ তাদের মাতৃভাষার গুরুত্ব এবং ভাষা-অধিকার রক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হয়। এটি মাতৃভাষা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য একটি বৈশ্বিক আন্দোলন হিসেবে ভূমিকা পালন করছে ।

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা :

একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা। যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, তাদের স্মরণ করে জাতি একত্রিত হয়ে তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এখন একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটির কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসে।

উপসংহার:

একুশে ফেব্রুয়ারি, ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য সংঘটিত একটি আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই দিনে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের আত্মত্যাগ স্মরণ করা হয়, এবং এটি একে অপরের ভাষাগত, সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আমাদের সচেতন করে। বাংলা ভাষার গুরুত্ব, জাতীয় চেতনা , এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে এই দিনটি পালন করা হয়, যা আজ বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ একটি দিবস হয়ে উঠেছে।

 

 

Tag :

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

তথ্য সংরক্ষণ করুন

শহিদ মিনার এলাকায় সিএমপি ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ নির্দেশনা

আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস চাঁদাবাজি নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল

একুশে ফেব্রুয়ারি

আপডেট সময়: ০৩:৫৯:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

একুশে ফেব্রুয়ারি (২১ ফেব্রুয়ারি)

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়, এবং এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এই দিনে ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর মূল কারণ এবং তা পালনের গুরুত্ব নিচে ব্যাখ্যা করা হলো:

ভাষার অধিকার রক্ষায় আন্দোলন :

– ১৯৪৭ সালে ভারত বিভाजन শেষে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের দুটি প্রধান অংশ ছিল ” পূর্ব পাকিস্তান ” (বর্তমানে বাংলাদেশ) এবং ” পশ্চিম পাকিস্তান ” (বর্তমানে পাকিস্তান)। পশ্চিম পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়, যদিও বাংলায় কথা বলত মানুষের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তানি সরকার ” উর্দু ” ভাষাকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা বাংলাভাষী মানুষের কাছে অত্যন্ত অবমাননাকর ছিল। বাংলার ভাষা-ভাষীরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে, এবং প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীরা *ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে* আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশ গুলি চালিয়ে *শহীদ করে*। এই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে যায়।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা :

একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা এবং বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার এক প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহীদদের আত্মত্যাগ এবং আন্দোলনের ফলে, একদিকে বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি লাভ করে, অন্যদিকে বাংলাভাষী মানুষের আত্মপরিচয় ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের জাতীয় ঐতিহ্য :

একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় চেতনার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি একটি ঐতিহাসিক দিন, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ হিসেবে কাজ করেছে। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব স্মরণ করা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল স্তম্ভগুলোর একটি।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস :

১৯৯৯ সালে, জাতিসংঘ (UNESCO) ২১ ফেব্রুয়ারি কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ তাদের মাতৃভাষার গুরুত্ব এবং ভাষা-অধিকার রক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হয়। এটি মাতৃভাষা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য একটি বৈশ্বিক আন্দোলন হিসেবে ভূমিকা পালন করছে ।

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা :

একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা। যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, তাদের স্মরণ করে জাতি একত্রিত হয়ে তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এখন একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটির কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসে।

উপসংহার:

একুশে ফেব্রুয়ারি, ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য সংঘটিত একটি আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই দিনে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের আত্মত্যাগ স্মরণ করা হয়, এবং এটি একে অপরের ভাষাগত, সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আমাদের সচেতন করে। বাংলা ভাষার গুরুত্ব, জাতীয় চেতনা , এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে এই দিনটি পালন করা হয়, যা আজ বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ একটি দিবস হয়ে উঠেছে।